Thursday, August 9, 2018

অপরিচিতা থেকে চিরপরিচিতা

কোলাহল আমার চিরকালেরই বিরক্তির কারন। তাই শহর থেকে মোটামোটি অনেকটা বেড়িয়ে হাটতে হাটতে গ্রামাঞ্চলের দিকে চলে গেলাম। মেঠোপথের ধার দিয়ে হাটতে হাটতে পৌছে গেলাম একটা বিশাল নির্জন ফাঁকা জায়গায়। আমি রাস্তার ধারের ঘাসের মাঝে বসেছিলাম। রাস্তাটা মোটামোটি জনমানবহীন। খুব কম লোকেই এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। আর আমার সামনে ছিল বিশাল এক জলাভূমি।  আমি এটাকে বিল বলব,  নাকি ডোবা বলব, নাকি অন্যকিছু বলব তা ভেবে ওঠতে পারিনি। একা একা অনেকক্ষণ যাবত বসে আছি। জল থেকে আসা বাতাসে হালকা হালকা চুল উড়ছে।  এবাবে প্রায় ঘন্টা খানেক আনমনে বসে থাকলাম।  কি যেন বসে বসে ভাবছিলাম, হয়ত বিচরন করছিলাম কল্পনালোকে।
হঠাৎ একটা স্পর্শে আমি খেয়ালে ফিরে আসলাম। কে যেন আমার দুচোখ দুহাত দিয়ে ঢেকে রাখছে। হালকা হাসির শব্দে আমার বুঝতে অসুবিধা হলোনা যে যিনি আমার চোখ বন্ধ করে রেখেছেন তিনি একটা মেয়ে। সে বললঃ
- বলুন তো আমি কে?
- আমার অপরিচিতা।
-  অপরিচিতা মানে?? বলতে বলতে মেয়েটি আমার চোখ থেকে হাত সরিয়ে নিল।
আমার বুঝতে একটু অসুবিধা হলনা যে মেয়েটি নিশ্চয় কারো সাথে আমাকে মিলিয়ে ফেলেছে। তাই আমার মুখ দেখে রীতিমতো চমকে ওঠল। হয়ত অপরিচিত কারো চোখ ধরে ফেলেছে বলে। আমি বললামঃ
- অপরিচিতা হলো আমার স্বপ্নের রাণী।
- তাহলে সে কোথায়?
- তাকেই তো খুঁজছি। সে তো আমার স্বপ্নে থাকে।
- হা হা ( হালকা হেসে) ।  আপনি এই বিলের মাঝে আপনার অপরিচিতাকে খুঁজছেন নাকি?
- তা হবে কেন?
  সাদার মাঝে আকাশী রঙের কি জানি একটা ড্রেস , পায়ে নুপুর পড়া মেয়েটি হঠাৎ ওঠে চলে যেতে চাইল। আমি বললামঃ
- আরেকটু থাকেন না।
- থাকলে কি হবে?
- একটু কথা বলা যাবে। একা একা তো অনেকক্ষণ যাবত বসে রইলাম তো।
- আচ্ছা ঠিক আছে।  আপনাকে তো আগে এই এলাকায় কখনো দেখেছি বলে মনে হয়না? আপনার বাসা কোথায়?
- আমার বাসা ময়মনসিংহে। আজকেই প্রথম এই এলাকায় আসলাম।
- ও। তো কেন আসলেন? কোনো কাজ আছে নাকি?
- নাহ। কোনো কাজ নেই। বললামই তো আমার অপরচিতাকে খুঁজতে এসেছি। আমার মনে হয় তাকে আমি এই এলাকাতেই খুঁজে পাব।
-খুঁজে কি পেয়েছেন?
- না।  এখনো পাইনি। কিন্তু খুব শ্রীগ্রই পেয়ে যাব বলে মনে হচ্ছে।
- আপনি তো খুব আজব লোক।  নিজের অপরিচিতাকে খুঁজতে আপনি সেই ময়মনসিংহ থেকে এখানে এসেছেন। আচ্ছা আমি আপনাকে আপনার অপরিচিতা খুঁজে পেতে সাহায্য করব।
- শুনে খুশি হলাম। ধন্যবাদ।
- আচ্ছা এত কথা বলছি তার মাঝে তো আপনার নামটাই জানা হলনা। কি নাম আপনার?
- আমার নাম নাসিম!  আপনার?
- আমার নাম অধরা।
- বাহ! খুব সুন্দর নাম তো আপনার।
- ধন্যবাদ।  আপনার নামও মন্দ নয়।
একজন বাদাম বিক্রেতার কাছ থেকে কিছু বাদাম কিনে রাখলাম। বললামঃ
- নেন। কিছু নেন।
- ঠিক আছে। আচ্ছা আমরা তো অনেকটা ফেন্ড হয়ে গেলাম।  তাহলে তো আমরা এখন আপনি আপনি না বলে তুমি করেই বলতে পারি।
- আচ্ছা ঠিক আছে।  আপনার ইচ্ছা।
- আবার আপনি?
- সরি তোমার ইচ্ছা।
- তো তোমার অপরিচিতা দেখতে কেমন?
- হা।  ও দেখতে আমার মনের মতো। 
- তাহলে সেটা আমি বুঝব কি করে সে কেমন?
- ধরে নাও তোমার মতোই।
- আমার মতো??? (একটু অবাক হয়ে)
- হা।
- আচ্ছা খুজে দিতে চেস্টা করব।
- আচ্ছা তোমার কি কোনো মনের মানুষ নেই?
- নাহ!  অনেকেই প্রস্তাব দিয়েছিল কিন্তু মনের মতো না হওয়ায় গ্রহন করিনি।
- আচ্ছা তোমার কেমন ছেলে পছন্দ?
- সহজ সরল সাদা মাটা পরিষ্কার মনের একটা ছেলে। যার সব কিছু ঘিরে থাকব শুধু আমি।
- বাহ!  ভাল।
- কি ভাল?
- মনের ইচ্চা।
- অনেকক্ষণ তো হল। এবার আমাকে  যেতেই হবে। বাড়িতে বোধ হয় খুঁজছে?
- তোমাদের বাড়ি কোনটা? 
-ঐযে গাছগুলোর মধ্যে দিয়ে দেখা যাচ্ছে ছোট্র একটা বাড়ি ঐটা।
- বাহ!  বেশ ভাল। আরেকটু বসো প্লিস?
- আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু বেশিক্ষণ নয় কিন্তু। নৌকা চড়েছো কখনো?
- হা চড়েছি। নানু বাড়িতে যাওয়ার সময় নৌকা দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু এই ডিঙিগুলো কখনো চড়িনি।
- কেন?
- সাঁতার জানিনা তো। যদি কখনো উলটে যায়?
- তুমি সাঁতার জাননা? আচ্ছা আরেকদিন দেখা হলে ডিঙি চড়াতে নিয়ে যাব।
- বেশ! 
- সত্যিই এবার কিন্তু আমাকে যেতে হবে। তোমার সাথে বলে ভালই লাগল। ভালো থেকো।
- আরে কোথায় যাচ্ছ? যাওয়ার আগে ফোন নাম্বার টা তো দিয়ে যাও, অপরিচিতাকে খুঁজে পেলে কিনা জানব কি ভাবে?
- আচ্ছা নিন. ০১৭********
-ধন্যবাদ।  আবার দেখা হবে। ফোন দিলে ধরো।
সে চলে গেল। কিন্তু সেই শেষ বিকালে আমার আছে রেখে গিয়েছিল এক মধুর স্মৃতি।  সেখানে আরো কিছুক্ষণ বসে থাকার পর হেঁটে হেঁটে বড় রাস্তায় ওঠে একটা গাড়ি ধরে শহরে চলে আসলাম। তারপর সেখান থেকে সন্ধার গাড়ি ধরে বাড়ি ফিরে আসলাম। ক্লান্ত শরীর,  সাথে একগুচ্ছ মধুর স্মৃতি। সত্যি বলতে কি আমার মনটাই সেদিন হারিয়ে ফেলে এসেছিলাম মেঠোপথের ধারের জলাশয়ের পাশের সেই নুপুর পড়া,  ভুল করে আমার চোখ ধরে ফেলা মেয়েটির মাঝে।
রাতে বাড়ি ফিরে ফ্রেস হয়ে খাবার সেরে তাকে ফোন দিলামঃ
- হ্যালো।  কে অধরা?
- হা।  আপনি কে?
- আমি নাসিম
- ও তুমি?
.
.
.
.
-এভাবে দুজনে একসাথে থাকব সবসময়।
.সেই যে কথা শুরু হল আজও চলছে। চলুক না জীবনভর।
ধীরে ধীরে সেই অধরাই হয়ে ওঠল আমার সেই স্বপ্নের মেয়ে।  আমার অপরিচিতা...

@নাসিম কর্তৃক লিখিত....

3 comments:

মেয়েদের বুঝি সৃষ্টিকর্তা কোনো এক শুক্রবার খুব যত্নে, আদরে গড়েছেন।

 মেয়েদের বুঝি সৃষ্টিকর্তা কোনো এক শুক্রবার খুব যত্নে, আদরে গড়েছেন।🥰🥰 হলি ক্রস কলেজের প্রিন্সিপাল সিস্টার শিখা মহিয়সী ছাত্রীদের উদ্দেশে ব...